প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধাঃ গুজরাটের মোরবিতে সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত ১৪০ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। নদীতে তলিয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে, মৃতদের মধ্যে বেশ কিছু মহিলা ও শিশু রয়েছে। তলিয়ে যাওয়া বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আহমেদাবাদ থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে ঝুলন্ত সেতুটি রবিবার সন্ধ্যা ৬ টা ৪২ মিনিটে ভেঙে পড়ে। সেই সময় সেতুর ওপর প্রায় ৫০০ জন লোক ছট পূজার অনুষ্ঠান করার জন্য এতে জড়ো হয়েছিল। মাচ্ছু নদীর ওপর ওই কেবল ব্রিজটি বহু পুরোনো। ১৮৭৯ সালে মোরবিতে ৭৬৫ ফুটের সেতুটি তৈরি হয়েছিল। সেটি জীর্ণ হয়ে যাওয়ায় মেরামতি করা হয়। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি সংস্কার করে চারদিন আগে (২৬ অক্টোবর) গুজরাটি নববর্ষে তা জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। তারপরই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, সেতুর উপর দাঁড়িয়ে লাফালাফি করছেন বহু মানুষ। এর পরেই নদীর উপর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সেতুটি।জানা গিয়েছে, শতাব্দী প্রাচীন এই সেতুটি সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ‘ওরেভা’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থাকে। সংস্কারের জন্য দীর্ঘ ৭ মাস সেতুটি বন্ধ ছিল। গত ২৬ অক্টোবর তা খোলা হয়। মোরবি পুরসভার তরফে সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ওই সংস্থা তাদের কাছ থেকে কোনও শংসাপত্র নেয়নি। এমনকি সেতু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও সরকারকে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। সরকার এই সেতু সম্পর্কে তেমন কিছুই জানত না, দাবি মোরবি পুরসভা কর্তৃপক্ষের।
সোমবার সকালে গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংঘভি জানিয়েছেন, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একটি ফৌজদারি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং একটি পাঁচ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে সেতু বিপর্যয়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। রাতভর উদ্ধারকার্য চালিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যরা। প্রয়োজনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকেও তলব করা হতে পারে। গুজরাটের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ব্রিজেশ মের্জা জানিয়েছেন, “গত সপ্তাহে সংস্কার কাজ হয়েছে। আমরাও হতবাক। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি, সরকার এই ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী।”রাজ্য সরকার দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যদের ৪ লক্ষ এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। সেতু বিপর্যয়ে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গুজরাটে থাকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছেন।